ঈমান ও আকীদার মানদন্ডে থার্টিফার্স্ট নাইট

 



ভূমিকা: প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের রাতটিকে বিশ্বের অনেক দেশে থার্টিফাস্ট রাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইদানীং আমাদের দেশেও এই রাতটি উক্ত নামে আখ্যায়িত হচ্ছে। যদিও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন রেওয়াজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও আগে থেকে চলে আসছে। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে বর্ষবরণের সাথে সাথে যোগ হয়েছে এই নূতন কথাটি “থার্টি ফাস্ট নাইট” যা হয়তো আরও ১০-১৫ বছর আগে মানুষ শুনে নাই।

প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের সামনে আলোচনা করতে চাই এই থার্টি ফাস্ট নাইট নিয়ে।

নিঃসন্দেহে ‘থার্টি ফাস্ট নাইট’ এটি মুসলমানদের কোন বিষয় নয় বরং এটি সর্ব প্রথম অমুসলিমরাই আবিষ্কার করেছে। তাই আসুন দেখি তারা কিভাবে এই রাতটি উপভোগ করে?

একেক দেশে একেক সংস্কৃতির মাধ্যমে র্বষবরণ অনুষ্ঠিত হয়। একজন অন্য জনের গায়ে পানি ছিটিয়ে থাইল্যান্ডরে উৎসব, আঙুর খেয়ে স্পেনের উৎসব, নবর্বষরে শুরুতে ঘুমালে চোখের ভ্রু সাদা হয়ে যায় সে কারণে শুরুর সময়টাতে না ঘুমিয়ে কোরিয়ানদের উৎসব, রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে বারোটি ঘণ্টা বাজানোর মাধ্যমে মেক্সিকোর উৎসব, ভোর হওয়ার সাথে শিক্ষকদের নিকট দীর্ঘায়ু কামনা করে ভিয়েতনামের উৎসব, পরিবারের সব সদস্যদের একত্রে রাতরে আহার করার মাধ্যমে আর্জেন্টিনা উৎসব, সাদা পোশাক পরিধান করে ব্রাজিল বাসীর উৎসব পালিত হয়। (এই অংশটি নেট থেকে সংগৃহীত)

এই আবিষ্কারকদের উৎসব পালনের পদ্ধতি যেখানে কিছু কুসংস্কার এবং কিছু শালীন কর্ম কাণ্ড রয়েছে।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নবাবিষ্কৃত এরাতের ভয়াবহতা:

আমারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। আমাদের দেশে এই রাত পালন হচ্ছে, নাচ,গান,বেহায়াপনা এবং চরম অশ্লীলতার লেটেস্ট রূপ ডিজে পার্টির মাধ্যমে।

প্রিয় পাঠক, দুঃখ জনক হলেও বাস্তব সত্য হল এই যে, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মর্ডানিজমের নামে তরুণ-তরুণীরা এ রাতে ‘মার্ডার’ হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:


“দুই শ্রেণীর জাহান্নামী রয়েছে, যাদের আমি এখনও দেখি নি। এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরু পরিচালনা করার লাঠি থাকবে। তা দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। আর নগ্ন পোশাক পরিধানকারী নারী, যারা পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ উহার সুগন্ধি এত এত দূর থেকে পাওয়া যায়’।” (মুসলিম, মিশকাত ৩৫২৪)


কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি:

প্রথমত: আমরা মুসলমান হিসেবে আমাদের জীবনের সবকিছুই হতে হবে ইসলামের আলোকে। অথচ এই ইসলাম তার নিজস্ব বর্ষ বরণ অর্থাৎ আরবী বর্ষ বরণের কথাও তার কোন অনুসারীকে বলে নাই।

দ্বিতীয়ত: রাত এবং দিন, আল্লাহ্‌ র সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত, তাই তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর বিধান মোতাবেক ব্যবহার এবং ভোগ ও উপভোগ করাই সমিচিন। তাই আসুন আমার দেখি রাত সম্পর্কে আল্লাহ্ কী বলেছেন?


সূরা নাবার ১০-১১ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা এরশাদ করেছেন:


وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا * وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا”،


“রাতকে করেছি আবরণ আর দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়।”


সূরা ইউনুসের -৬৭ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা এরশাদ করেছেন:


“وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمْ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا”


“তিনি তোমাদের জন্য তৈরি করেছেন রাত যাতে করে তোমরা তাতে প্রশান্তি লাভ করতে পার, আর দিন দিয়েছেন দর্শন করার জন্য।”


সূরা কাসাসের ৭৩ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা এরশাদ করেছেন:


وَمِنْ رَحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ


“তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্য রাতও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”


সূরা মুযযাম্মিলের ১-৩ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা এরশাদ করেছেন:


يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ. قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا. نِصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا. أَوْ زِدْ عَلَيْهِ


“হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দণ্ডয়মান হন কিছু অংশ বাদ দিয়ে, অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম অথবা তদপেক্ষা বেশী।”

তাহলে এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে রাতের মূল কাজ হল মানুষ আরাম করবে এবং রাতের কিছু অংশ আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করবে।


হাদীসে রাত সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে:


((ينزل ربنا تبارك وتعالى إلى السماء الدنيا كل ليلة حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول: من يدعوني فأستجيب له، من يسألني فأعطيه، من يستغفرني فأغفر له، حتى ينفجر الفجر))


“রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দয়াময় রব পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন কে আমার নিকট কোন দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করব, কে আমার নিকট কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিব, কে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব, এভাবে ফজর হওয়া পর্যন্ত তা চলতে থাকে।” (বুখারী হাদীস নং ১১৪৫ মুসলিম হাদীস নং-৭৫৮)


প্রিয় পাঠক মহান আল্লাহ্‌ যখন মানব মণ্ডলীকে এইভাবে আহ্বান করতে থাকে তখন কেউ কি করে অশ্লীলতা এবং বেহায়াপনায় মগ্ন থাকতে পারে?!


Post a Comment

0 Comments