বৈবাহিক জীবনে ছোটোখাটো সমস্যা থাকাটা খুব স্বাভাবিক।এই সমস্যাকে বড় করে না দেখে যে কত সুন্দরভাবে জীবনকে উপভোগ করা যায় তা লেখক গল্পের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যে আসলে কতটা মধুর তা এই বইটি পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন।
এটি আসলেই একটি পারিবারিক প্রেস্ক্রিপশন।প্রত্যেক যুবক-যুবতী, স্বামী-স্ত্রীর বইটি পড়া উচিত।
প্রতিটি নব-দম্পতীর জন্য অবশ্য পাঠ্য একটি বই।যারা নব-দম্পতীদের জন্য বই উপহার দিতে চান, তাদেরকে আমি এই বইটি সাজেস্ট করব।
লেখকের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল এত সুন্দর লেখনীর জন্য।
লাভ ক্যান্ডি বইতে যা রয়েছে :
লাভক্যান্ডি বইতে মোট ১২টি গল্প রয়েছে। এই ১২টি গল্পকে লেখক চারটি অধ্যায়ে বিন্যাস্ত করে আলোচনা করেছেন। বইয়ের প্রধান চরিত্র আদিব ও হাসান নামে দুই বন্ধুকে ঘিরে। যেখানে দেখা যায় আদিব তার স্ত্রী ও সাংসারিক জীবন নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছে। পক্ষান্তরে হাসানের পরিবারে নেই কোন সুখ, স্বচ্ছন্দ ও ভালোবাসার দেখা। সবখানেই যেন ছেয়ে আছে বিষাদের ঘনঘটা। এছাড়াও বইতে ডা. রাকিব সহ আরো বেশকিছু চরিত্রের উপস্থিতি রয়েছে।
এক্ষনে আমি বইয়ের চারটি অধ্যায় সম্পর্কে খুব সংক্ষেপে আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ-
প্রথম অধ্যায়:-
এই অধ্যায়ের গল্পে গল্পে উঠে এদেছে আদীব ও স্নেহার সুখময় দাম্পত্য জীবনের কথা । প্রেম, ভালোবাসা, রোমান্স যে বৈধভাবেও হতে পারে এই অধ্যায়টি না পড়লে পাঠকের কাছে তা অপূর্ণই থেকে যাবে। সৎ সুন্দর ও পবিত্র ভালোবাসা গুলো বুঝি এমনই হয় মাশাআল্লাহ। আহা! তাদের সংসার কত সুখের। এ যেন দুনিয়াতেই জান্নাতের আবহ।
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ-
একজন মা তার সন্তানকে পৃথিবীর বুকে আনার জন্য কি পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেন তার একটি বর্ণনা পাবেন এই অধ্যায়ে। সেই সাথে পাঠক বুঝতে পারবেন নিজ অবস্থা যত প্রতিকুল মাঝেই থাকুক না কেন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার মাঝের অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এই অধ্যায়ে পাঠক পাবেন এক ধৈর্যশীল বাবা ও তার পরিবারের দায়িত্বসম্পন্ন উপাখ্যান। যা পড়ে পাঠকের চোখ অশ্রুজলে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
তৃতীয় অধ্যায়:-
নিজের অনুভব ও অনূভুতিকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়ার মত তিনটি গল্প রয়েছে এই অধ্যায়ে। এছাড়া সরস চিঠি গল্পে মাইশাকে দেয়া একটি চিঠির বার্তা। যেই চিঠির কথা গুলোর মর্ম উপলদ্ধির জন্য হলেও প্রত্যেক জন্য বইটি একবার পড়া উচিত।
চতুর্থ অধ্যায়ঃ-
বর্তমান সময়ের মানুষগুলোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এটি। লেখক পারিবারিক প্রেসক্রিপশন ১ ও পারিবারিক প্রেসক্রিপশন ২ বামের দুটি গল্পে নিখুঁতভাবে পারিবারিক সমস্যা ও তার সমাধানগুলো তুলে ধরেছেন।
লাভ ক্যান্ডি বইয়ের কিছু ভালো দিক
১। দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ।
২। গল্পের পরতে পরতে সুন্দর উপমার ব্যবহার।
৩। সহজ, সরল ও উপযোগী শব্দচয়ন।
৩। আকর্ষণীয় শব্দের মাধ্যমে গল্পগুলোর নামকরণ।
যে কারনে লাভ ক্যান্ডি বইটি পড়বেন
বইটি আপনি তার অন্যতম কারণ হলো বইতে আপনি গল্পে গল্পে সুখময় জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। এমন কিছু দিকনির্দেশনা পাবেন যা আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
বইয়ের গল্পগুলোতে হয়তো শেষে কোন টুইস্ট নেই বা এমন কোন শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি নেই যা আপনাকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে তবুও আপনি দ্রুততার সাথে বইটি পড়তে বাধ্য হবেন। এর অন্যতম কারণ হলো বইয়ের প্রতিটি পাতায় আপনি পাবেন শিক্ষণীয় উপাদান। প্রতিটি চরিত্রের সাথে আপনি নিজেকে কল্পনা করবেন। মনে হবে প্রতিটি গল্প বুঝি আপনাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা হয়েছে।
বইয়র গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক
মাশাআল্লাহ্, স্বামী-স্ত্রী , অবিবাহিত যুবক-যুবতী সবার জন্য সত্যিই একটা প্রেসক্রিপশন ।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত,কি কি বিষয়ে সবসময় লক্ষ্য রাখা উচিৎ ,
সন্তান নেয়া বিষয়ে টিপস সহ
অনেক কিছু গল্পের মাধ্যমে সাবলীল ভাবে শিখিয়ে দিয়েছে এই বইটি।
একজন পাঠকের অনূভুতি
ব্যক্তিগত অনূভুতি যদি বলতে হয় তাহলে বলবো বইটি এককথায় অসাধারন। প্রতিটি পাতায় রয়েছে লেখকের কঠোর পরিশ্রমের ছোয়া। বইতে বিবাহিত এবং অবিবাহিত সকলের জন্য রয়েছে শিক্ষণীয় অনেক টিপস। আমার পড়া সেরা একটা বই। এমন অনেক কিছু জানলাম যা আমার জানা ছিলো না। যে একটা চিঠি এখানে দেয়া হয়েছে অনেকের জন্য আশা করি সেরা একটা প্রেস্ক্রিপশান হবে ইন শা আল্লাহ। এক কথায় বলা যায় পরিবারের জন্য সেরা সেরা সেরা একটা প্রেস্ক্রিপশান রোগ দৌড়ে পালাবেই পালাবে ইন শা আল্লাহ। আল্লাহ লেখক ভাইকে বারাকা দান করুন। আমাদের এমন আরো বই উপহার দিতে আল্লাহ আপনি ভাই শক্তি, সামর্থ্য আর প্রবল ইচ্ছা শক্তি দান করুন। আমিন
সবগুলো গল্প মন ছুঁয়ে যাওয়ার মত এবং শান্তির সঞ্চারক। গল্পগুলো পড়ে পাঠক কখনো হাসবেন আবার কখনো চক্ষুদয় অশ্রুসিক্ত হয়ে গড়িয়ে পড়বে অশ্রুফোটা। সুখপাঠ্য গদ্য ও গল্পের মাধ্যমে অভিনব উপস্থাপন কৌশল পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখবে বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। যার প্রত্যেকটি গল্পই ছিল আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ভিন্ন মাত্রার স্বাদে ভরপুর।
তাই সকলের প্রতি অনুরোধ লাভক্যান্ডি বইটি একবার হলেও পড়ুন, সেই সাথে বইতে দেয়া বিভিন্ন টিপস গুলো ফলো করতে চেষ্টা করুন। দেখবেন দুনিয়ার জীবনে আপনিই হবেন সর্বময় সুখের অধিকারী, ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে একটা কথাই বলব , যদি আমার সামর্থ্য থাকত যুবক যুবতী অবিবাহিত সবাইকেই এই বইটা গিফট করতাম ।
প্রতিটি যুবকের হাতে ‘লাভ ক্যান্ডি’ থাকুক।
প্রতিটি যুবতীর কাছে ‘লাভ ক্যান্ডি’ পৌছুক।
প্রতিটি স্বামী ‘লাভ ক্যান্ডি’ পড়ুক।
প্রতিটি স্ত্রী ‘লাভ ক্যান্ডি’ বুকে ধারণ করুক।
লাভ ক্যান্ডি পড়তে পড়তে নিজেকে কল্পনার রাজ্যে চালান করে দিয়ে কখন যে নিজেকে হারিয়েছিলাম বেমালুম ভুলে গেছি। কোন বই অসাধারণ হয় জানতাম, কিন্তু এতো অসাধারণ হয় জানতাম না।
বই এর প্রতিটা গল্প জাফর বিপি ভাইয়া এতো টা মনোমুগ্ধকর রূপে উপস্থাপন করেছেন যা বলার বাহিরে। বই টা এতটাই অসাধারণ যে বই এর প্রতিটা পাতায় আমি নিজেকে নিজের অজান্তেই বার বার হারিয়ে ফেলছিলাম। কখনো আদিব আর স্নেহার খুনসুটি পানায় মুখ টিপে হাসছিলাম, কখনো বা হাসান আর মাইশার ঝগড়া ঝাটিতে বর্তমান পরিবার গুলোর কোথা ভেবে হতাশ হচ্ছিলাম........।
এই বই এর রিভিউ লিখার মতো যোগ্যতা আমার মতো নগন্য ব্যক্তির দ্বারা সম্ভব না...। কোন বই ভালো লাগলে সুন্দর শব্দ দিয়ে বইটির অভিব্যক্তি প্রকাশ করি, তবে লাভ ক্যান্ডি বই এর সাথে সুন্দর শব্দ বেমানান.... !!!সুন্দর এর চেয়েও কোনো উন্নত শব্দ দিয়েও যদি বইটির অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয় তাও হয়ত বইটির মূল অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যাবে না....।
আল্লাহ জাফর বিপি ভাইয়ার এ অসাধারণ পরিবেশন কে তার জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসাবে কবুল করুন...।
0 Comments