গোল্ড ইজ মানি pdf download | জেমস রিকার্ডস

 




কী আছে বইটাতে?
আচ্ছা! ছোট করে বলা কঠিন‌। তবুও চেষ্টা করা যাক। বইটাতে আলোচনা করা হয়েছে বিশ্বের অর্থব্যবস্থার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সেইসাথে রাজনীতি আর অর্থনীতির সম্পর্ক। আর… প্রাচীন বিনিময় প্রথা হতে শুরু করে কড়ি, ধাতব মুদ্

রা, ব্যাংক নোট হয়ে ডিজিটাল কারেন্সি পর্যন্ত সকল ধরনের মুদ্রার মাঝে যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হচ্ছে স্বর্ণ; তার পক্ষে সকল প্রমাণাদি ও ভবিষ্যদ্বাণী তুলে ধরা হয়েছে।
তার আগে আসুন, আমরা একটু জেনে নিই, আমাদের অর্থব্যবস্থা আসলে কীসের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা অনেকেই জানি যে, ব্যাংকে স্বর্ণের রিজার্ভ থাকে। তার বিপরীতে আমরা কাগজের নোট… ওয়েট। এটা অনেক পুরনো পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাঝে অনেকগুলো পরিবর্তন এসেছে বিভিন্ন প্রয়োজনে‌। বইটিতে সবগুলো সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে।

আপনি যদি‌ একটা ক্লু চান, দিতে পারি। কাগজের নোট টিকে থাকার অন্যতম কারণ জনগণের আস্থাশীলতা। ব্যাপারটা অদ্ভুত শোনালেও সত্যি।

আমি নিজের জানা একটা ঘটনা বলি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল পাকিস্তান আমলের টাকাগুলো ফেরত দিয়ে নতুন টাকা নেয়ার জন্য। গুটিকয়েক মানুষের তাদের হাতে থাকা টাকার উপর এতই আস্থা ছিল যে, তারা টাকা আর বিনিময় করে নি। সেগুলো পরে বাতিল হয় [এবং তার প্রমাণস্বরূপ আমার কাছে পাকিস্তান আমলের জিন্নাহর ছবিওয়ালা একটা ১০০ টাকার নোট রয়ে গেছে :) ]

আপনি ভাবছেন, লোকগুলো কী বোকা ছিল! অথচ আপনি এখন শুনতে পাচ্ছেন এবং বিশ্বাস করছেন যে, ভবিষ্যৎ পৃথিবী চলবে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে। কিন্তু একবার ভাবুন, আপনার কাছে যদি আজ ১০ লাখ টাকার ক্রিপ্টোকারেন্সি থাকে এবং আগামীকাল সকালে উঠে দেখেন, ওই ক্রিপ্টোকয়েন বিলুপ্ত হয়ে গেছে; আপনি কার কাছে অভিযোগ করবেন? আপনি তো জানেনই না, ওই ক্রিপ্টোকয়েন কে চালু করেছে। আড়ালে থাকা কয়েকজন ছাড়া কেউই জানে না।

মাঝে মাঝে অনেককে ক্রিপ্টো নিয়ে কথা বলতে দেখি। গর্ব আর আশা করতে দেখি, একদিন তারা এই ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট থেকে অনেক লাভবান হবে। অথচ এটার বিন্দুমাত্রও গ্যারান্টি নেই। ব্যাংকও দেউলিয়া হয়ে যায়। তবুও মানুষ টাকা রাখার জন্য ব্যাংককেই বেছে নেয়। এমনই হচ্ছে মানুষের আস্থাশীলতা।

এই আস্থাশীলতাকে কাজে লাগিয়েই আমাদের দিনদিন মূল কারেন্সি স্বর্ণ থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু যারা বুদ্ধিমান, তারা ঠিকই স্বর্ণ রিজার্ভ করে চলেছে। রাশিয়া আর চীন যে স্বর্ণের রিজার্ভ বৃদ্ধি করে চলেছে, সেগুলো সবই‌ জানা। আজ যে তারা প্রতি পদে পদে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করছে, সেটা কিন্তু শুধু সামরিক শক্তির কারণে নয়। মূল শক্তি হচ্ছে তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বিশ্বরাজনীতিতে অচিরেই একটা বড়সড় পরিবর্তন দেখতে পাবো। আমেরিকার দাদাগিরি হয়তো আর বেশিদিন চলবে না!
কিন্তু কীভাবে?

“গোল্ড ইজ মানি” বইটাতে খুব সুন্দর করে সব বুঝিয়ে বলেছেন লেখক। তার উপর অনুবাদক সাহেব বাঙালি মস্তিষ্কের জন্য এত সহজ করে পরিমার্জনা করেছেন যে, বইটা একটানা না পড়ে থাকতে পারি নি।

অর্থনীতির ব্যাপারগুলো আমার কাছে কেমন যেন ফিজিওলজিতে পড়া বডির বিভিন্ন মেকানিজমের মতো লেগেছে। শুধু তাই না, শরীরের প্রতিরক্ষা স্তরের মতো দেশের অর্থনীতি রক্ষারও বিভিন্ন স্তর আছে। দেশে দ্রব্যমূল্য একটু এদিক-ওদিক হলেই আমরা সরকারকে অনেক গালাগাল করি। কিন্তু ব্যাপারগুলো আসলেই বেশ জটিল। বইটা পড়ে আমার তাই মনে হলো। শুধু তাই না, আমার আগে ধারণা ছিল, মুদ্রাস্ফীতি মানেই খারাপ। কেন এই মুদ্রাস্ফীতি সবসময়ই চালু থাকে, আজ তার উত্তর পেলাম।

যাই হোক, বইটাতে যে বিষয়টার উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে স্বর্ণ। আপনারা অনেকেই শুনে থাকেন যে, স্বর্ণে ইনভেস্ট করুন, পরে কাজে দিবে। জানি, ভবিষ্যতে অনেক ফ্রড এসে আপনাকে এটারও প্রলোভন দেখাবে। ভুলপথে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক জ্ঞান না থাকায় আপনি স্বর্ণে ইনভেস্ট করেও অর্থ খোয়াতে পারেন। তাই আগেভাগেই এই বইটা পড়া বেশ প্রয়োজন,‌ মনে হচ্ছে । 

কিছু কিছু বিষয়ের বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। এই বইটা পড়ে যতটুকু জ্ঞান মাথায় এলো, শুধু বইয়ের মূল্য দিয়ে তার ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব না। মূললেখক ও অনুবাদকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও‌ শ্রদ্ধা ছাড়া দেওয়ার মতো বিশেষ কিছু নেই আমার কাছে। তাদের জন্য অনেক দোয়া রইলো।



বইটি ডাউনলোড করতে


Post a Comment

0 Comments