ছোট বলে সবসময় অবহেলা করতে নেই। অনেক সময় ছোট'র মধ্যেই অসাধারণ কিছুর দেখা মেলে। 'আমরা আবরাহার যুগে নই' বইটাকে সেরকম 'ছোট' ধরে নিতে পারেন।
'আবরাহার যুগ' কথাটা এখানে রূপকার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আবরাহা নাম দেখে অনেকে ভেবে বসতে পারেন আবরাহার কাবা ভাঙ্গা কিচ্ছা নিয়ে মনে হয় বইটি। কিন্তু না, এটি এরচে আরো বেশি কিছু।
আবরাহার ঘটনাটা বহুবার বহুভাবে পড়েছি বইপত্রে। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতের বেলায় যেসব আসমানী সাহায্য হুড়মুড় করে নেমে আসত সেসবও পড়েছি। তবে ভাবনাতে এমন নতুনত্বের কিছু উদিত হয়নি। কখনো এভাবে পুরো ব্যাপারটি ভাবিনি, যা বইটি আমার সামনে উন্মোচিত করেছে। এর সারকথা হলো, আবরাহার ঘটনার আগ পর্যন্ত বড়সড় বিপদগুলোতে আসমান থেকে গায়েবী সাহায্য নেমে আসত মুমিনদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু আবরাহার ঘটনাটাই এই ধারাবাহিকতার কফিনে মারা শেষ পেরেক। এরপর থেকে এই ধারা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তিত নীতিতে মুমিনদের নিজেদেরকেই আত্মরক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিতে হয়। বদর, ওহুদ, খন্দক সবখানে নিজেদেরকেই যা করার করতে হয়। সেহিসেবে আমরা আবরাহারর যুগে আর রইনি। ঢুকে পড়েছি এক নতুন যুগে। নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করতে হবার যুগে। বইটির নাম থেকে এই সারকথা মনে হয় পুরো ফুটে উঠেনি। আমার প্রস্তাবানুসারে 'আমাদেরকেই জাগতে হবে' নামটা বইটির বিষয়বস্তুর সার্থক প্রতিনিধিত্ব করত। মানে, যা করার আমাদেরকেই করতে হবে। আসমান থেকে অটোমেটিক সাহায্য এসে শত্রুদের কচুকাটা করে আমাদেরকে রক্ষা করবে না। সেই যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অবশ্য বর্তমান নামটি আরবীনামের হুবহু অনুবাদ হিসেবে ঠিক আছে।
সারজানির বইয়ের একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এর থেকে আপনি চিন্তার নতুনত্ব পাবেন। উনার ভাবনাগুলো খুব সুন্দর, আধুনিক, গোছানো আর যুগোপযোগী। এই পুরো বইটাকে আমার একটা আয়াতের সমকালীন তাফসীর বলে মনে হয়েছে। তা হলো- 'যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনকে) সাহায্য করো তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন।'
দেখবেন, ঘুরেঘুরে বইটির জায়গায় জায়গায় এই আয়াতটি আসছে। যেন এই আয়াতের মূল কথাটারই তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের যুগের দর্পণে।
আরেকটা বিষয় আমার খুব ভাল লেগেছে। তা হলো, শরীয়ত বাস্তবায়নের তিনটা স্তর লেখক দেখিয়েছেন-
ক. ব্যক্তিকেন্দ্রিক। যেমন : ব্যক্তিগত পর্যায়ের শরীয়তের বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা।
খ. সমাজকেন্দ্রিক। যেমন : যিনিই যাদের ওপর দায়িত্বশীল, তিনি অধীনস্তদের মধ্যে শরীয়তের বিধান বাস্তবায়ন করা।
গ. রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। যেমন : হুদুদ-কেসাসের বিধান বাস্তবায়ন করা।
আমরা শরীয়ত বাস্তবায়নের জন্য শুধু শাসকদের দিকেই তাকিয়ে থাকি। তাদের দোষারোপ করি। তাদের দায়ী করি। কিন্তু বাকি দুইটা পর্যায়ে নিজেরা কতটুকু শরীয়ত বাস্তবায়ন করলাম সেই খোঁজ নেই না।
বইটি আমার সম্পাদনা করা। সেজন্যই একটা বিষয় না বলে পারছি না। বইটিতে ছোট দু'টি বাক্য এমন আছে, যা বাক্য হিসেবে সঠিক না। আমি প্রকাশিত বইটি পুনরায় পড়েছি। সম্পাদনাসহ এই নিয়ে বইটি তিন-চারবার পড়া হলো। তো প্রকাশিত বইটিতে ওই দুইটা বাক্য দেখে নিজের উপরই বিরক্ত লাগছিল যে এমন ভুল কিভাবে রয়ে গেল! কিন্তু বিশ্বাসও হচ্ছিল না যে আমি দুইবার করে দেখার পরেও এমন বাক্যসঠিকজনিত ভুল থেকে যেতে পারে। তাই লেপটপ থেকে সম্পাদিত ফাইল ওপেন করে দেখলাম আমার সম্পাদিত ফাইলে বাক্য দু'টি ঠিকই ছিল। পরে কারো দ্বারা এমনটি হয়েছে। সুতরাং এর দায় আমার না।
প্রকাশিত বইতে বাক্যটি এমন-
'রাসূল সা. এর জন্মের সাথেসাথে যা পূর্বেকার রীতিতে পরিবর্তন ঘটেছে।'
আমার সম্পাদিত ও প্রেরণকৃত ফাইলে এমন-
'কিন্তু রাসূল সা. এর জন্মের সাথে সাথে যা পরিবর্তিত হয়েছে তা হলো ধ্বংসের পদ্ধতি।'
প্রকাশিত বইতে বাক্যটি এমন-
'যখন মুসলমানরা আমল পেশ করবে তখন আল্লাহ তাআলা তাদের কাছে (আবরাহার বাহিনীকে ধ্বংসকারী) পাখির ঝাঁকের ন্যায় কোন সাহায্য পাঠাতেন।'
পেশ করবে এর সাথে পাঠাতেন কথাটা খাপ খায়নি।
আমার সম্পাদিত ও প্রেরণকৃত ফাইলে এমন-
'যখন মুসলমানরা আমল পেশ করবে তখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে (আবরাহার বাহিনীকে ধ্বংসকারী) পাখির ঝাঁকের ন্যায় সাহায্য করবেন।'
যাইহোক, বইটি ছোট হলেও আপনাকে সম্পূর্ণ নতুন কিছু খোরাক দিবে। যা আগে কখনো আপনি এভাবে ভাবেননি। আমি এই ছোট বইটি দ্বারা জ্ঞানগতভাবে এতটুকু উপকৃত হয়েছি, যা এরচে তিনগুণ বড় বই পড়েও হইনি অনেক সময়।
বইটির পিডিএফ লিংক
একটি ড্রাইভ লিংক বাকি দুটো ফাঁকা
0 Comments