ক্রাচের কর্নেল pdf download | শাহাদুজ্জামান

ক্রাচের কর্নেল pdf download | শাহাদুজ্জামান

 



পড়ে শেষ করলাম বর্তমান সময়ের মননশীল লেখক শাহাদুজ্জামানের বই 'ক্রাচের কর্নেল'। ক্রাচের কর্নেল বইটিকে লেখকের ভাষ্যমতে ইতিহাস,আত্মজীবনী নাকি উপন্যাস এভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেয়েও তিনি বইকে মূলত সংজ্ঞায়িত করেছেন সময়কে উপজীব্য করে। ভবিষ্যত কে জানতে হলে অবশ্যই অতীত ইতিহাসের সাথে মানুষকে পথ চলতে হয়। তারই প্রয়াস থেকে লেখকের কৌতূহল ছিল তাঁর বেড়ে ওঠার সময়কে তুলে ধরবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়টিকে প্রতিনিধিত্ব করবে এমন একটি বই তিনি লিখতে চেয়েছেন যা পাঠকদের মাঝে আগ্রহ তৈরি করবে। উপন্যাস আত্মজীবনী এবং ইতিহাসের সংমিশ্রণে সময়কে সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়ে তখন তিনি সাহিত্য ও গবেষণায় মন বসালেন,লিখলেন ক্রাচের কর্নেল। 


মুলত বইটির মূল চরিত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেল,বীরবিক্রম। মা আশরাফুন্ন্নেছা এবং বাবা মহিউদ্দিন আহমেদের দশ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় সন্তান আবু তাহের ওরফে নান্টু। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন স্থির, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন ক্ষুদিরামের অনুরক্ত। জীবনের স্রোতে এগিয়ে চলা তাহেরের জীবনে সেনাবাহিনীতে যোগদান, লুৎফার সাথে বিয়ে, যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও ১১ নং সেক্টরে অকুতোভয় কমান্ডার হয়ে নিজের পা হারিয়ে একাধিকবার প্রমাণ করেন দেশের প্রতি তীব্র ভালবাসা। একজন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক তাহের দেশকে পাকসেনাদের থেকে মুক্ত করতে নিয়েছেন সর্বোচ্চ জীবনের ঝুঁকি, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে শ্রমিক, কৃষকদের নিয়ে গড়ে ওঠা যোদ্ধাদের দিয়েছেন সঠিক দিকনির্দেশনা। 


ঘটনার পরিভ্রমণ ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ হওয়ায় অচিরেই সময়ে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ,মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃংখলা, দুর্ভিক্ষ এবং রাজনীতির বিভিন্ন গোষ্ঠীর নানান টালবাহানা। 

১৫ অগাস্টের বিভীষিকাময় অধ্যায়, দেশপ্রেমিক ৪ নেতার হ-ত্যা সহ দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং রাজনীতির বিভিন্ন বাঁক নিয়ে লিখেছেন লেখক। 

বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরবর্তিতে খোন্দকার মোশতাকের ৮১ দিনের শাসন শেষে খালেদ মোশাররফের ক্ষমতায় বসা ,জেনারেল জিয়া কে গৃহবন্দি করা এবং জাসদ নেতা তাহের জিয়াকে উদ্ধার করা থেকে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক অধ্যায় উঠে এসেছে বইয়ে। 


একান্ত ব্যক্তিগতভাবে বলব বইটি আমাকে ভীষণ মাত্রায় ছুঁয়ে গেছে। লেখকের লেখনীতে স্বাধীনতার পরবর্তী কালকে নিয়ে একটা আবহ সত্যিই পাঠককে ধরে রেখেছে। লেখকের ভাষ্যমতে তিনি বারবারই চেয়েছেন মানুষের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করতে। এক্ষেত্রে তিনি আসলেই স্বার্থক। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র, ঘটনা, উপাত্ত যেহেতু বাস্তব সেক্ষেত্রে তিনি উপন্যাসটি কে সাজিয়েছেন অত্যন্ত সংবেদনশীল ভাবে। ইতিহাসে অস্তিত্ব রয়েছে এমন একজন বিশিষ্ট দেশপ্রেমিকের জীবননির্ভর ফিকশন সেখানে তিনি গল্পকে ন্যারেট করেছেন ফ্ল্যাসফোরয়ার্ড স্টাইলে। বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের দিনটিকে তির্যকভাবে ইঙ্গিত দিয়ে ঘটনার তীব্রতা বুঝিয়েছেন। যেহেতু কর্নেলের জীবনের শেষ অধ্যায়টি অত্যন্ত সেন্সিটিভ তাই কোনরকম জাস্টিফিকেশিনের দিকে যাওয়ার সাহস আমি করছিনা । যেহেতু ইতিহাস লেখকেরা নিজের দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকেই তুলে ধরতে চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রে অনেক বিষয়বস্তু হয়তো বা নিরপেক্ষভাবে উঠে আসেনি এমন টা দাবি হয়তো অনেক এসে থাকবে।কিছু ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল ইনসাইট আরেকটু ডিটেইল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। 


কর্নেল তাহের, মুক্তিযুদ্ধে সাহসী অবদান, দেশের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ, আর গড়তে চেয়েছিলেন সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। উত্থান পতনের রাজনীতিতে হোঁচট খেয়ে পড়েছেন, বারবার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। শেষটায় লেখক স্পষ্ট প্রশ্ন করে গিয়েছেন একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকের প্রাপ্তি ছিল এই! 


ইতিহাসের এই জটিল অধ্যায়ে অসংখ্য বার প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার নিরপেক্ষতার, পক্ষপাতদূষ্টতার। তাই জটিল সে সমীকরণকে এক পাশে রেখে সবশেষে বলব ইতিহাস বা আত্মজীবনী হিসেবে নয় বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব এবং পরবর্তী সময়কে জানতে এবং ইতিহাসে কৌতূহলী হতে ক্রাচের কর্নেল সুপাঠ্য। ৩৫০ পৃষ্ঠার ইতিহাসের পটপরিবর্তনকে উপজীব্য করে লেখা ক্রাচের কর্ণেল পাঠকের জন্য recommended.


বইটির পিডিএফ লিংক

লিংক ১ | লিংক ২ | লিংক ৩ ]

একটি ড্রাইভ লিংক বাকি দুটো ফাঁকা

Post a Comment

0 Comments